প্রতি বিশ্বাকাপে বলের ডিজাইন ও নাম (১৯৩০-২০২২)

বিশ্বের সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে উত্তেজনার খেলা ফুটবল। পৃথিবীতে ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ফুটবল খেলা ছোট বড় সবার কাছেই প্রিয়। বিশেষ করে বিশ্বাকাপের মত আসর আসলে ফুটবল খেলার উন্মাদনায় মেতে ওঠে পুরু বিশ্ব। প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়ার এসব নিয়ে চর্চা হয় সবার মাঝে। প্লেয়ার বা দল আসে যায়, আসবে যাবে, কিন্তু কখনও যে খেলার মূল অস্ত্র ফুটবল এ নিয়ে কেউ ভাবে না। কোন ধরনের বল দিয়ে খেলা হয়তো সেটাও খেলা দেখার সময় লখ্য করা সময় হয় না। অথচ যতবার ফুটবল বিশ্বাকপ আয়োজন করা হয়েছে ততবার নিজের নাম ও রঙ পরিবর্তন করেছে হাজার বার নেটে প্রবেশ করানো এই বল।




বলের রঙ ও নাম পরিবর্তন করা মধ্যে রয়েছে মজার তথ্য। জেনে নেয়া যাক প্রথম বিশ্বাকাপ আসর থেকে শুরু করে ২০২২ কাতার বিশ্বাকাপে যে বল ব্যবহার করা হবে তার নাম। ১৯৭০ সালের আগে পর্যন্ত খেলায় বল সরবরাহ করতো স্বাগতিক দেশ।

ফুটবল বিশ্বাকাপের প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিলো উরুগুয়ে-তে ১৯৩০ সালে। এই বিশ্বাকাপে যে বল দিয়ে খেলা হয়েছিলো টি-মডেল নামের বল দিয়ে। ১৯৩৪ সালের বিশ্বাকাপ আয়োজন করে ইতালি।  ইতালিতে খেলা হয়েছিলো ফেদেরালে-১০২ নামের বল দিয়ে। ফ্রান্সে ১৯৩৮ সালের আয়োজন করা বিশ্বাকাপে খেলা হয় অ্যালেন নামের বল দিয়ে।

"এরপর ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারনে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ বিশ্বাকাপ আসর বাতিল ঘোষনা করে FIFA।"

২য় বিশ্বাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৫০-এর বিশ্বাকাপ আয়োজন করে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। দুপলো-টি নামের বল দিয়ে খেলা হয় বাজিলে আয়োজিত এই বিশ্বকাপ। অবাক করা বিষয় হচ্ছে বলটি ছিলো পুরুপুরি চামড়ার তৈরি। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ডে হওয়া বিশ্বাকাপটিতে বলটির নাম ছিলো "সুইজ ওয়ার্ড চ্যাম্পিয়ন"। সুইডেনে ১৯৫৮ সালের বিশ্বাকাপে বলের নাম ছিলো " টপ ষ্টার"। ১৯৬২ সালে চিলিতে বলটির নাম ছিলো "ক্র‍্যাক"। ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ তে বলটি ছিলো স্লাজেঙ্গার চ্যালেঞ্জ।

১৯৭০ বিশ্বাকাপ থেকে এখন পর্যন্ত ফিফা অফিসিয়াল ম্যাচ বল ব্যবহার করছে। আর তখনই ফিফার সাথে চুক্তি হয় খেলা সামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান adidas। এরপর ফিফার প্রতিটি আসরে Adidas বল সরবরাহ করছে। ১৯৭০ এর মেক্সিকো আয়োজিত বিশ্বাকাপের বলের নতুন এক ডিজাইনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ফুটবল বিশ্বকে। টেলস্টার নামের বলটি সাদা ও কালো রঙের পঞ্চভূজ আকৃতির মিশ্রন ব্যবহার করা হয়েছে। বলে এই ডিজাইন ফুটবল ইতিহারে চিরস্থায়ী হয়ে আছে। ১৯৭৪-এর জার্মানি আসরে টেলস্টার ড্যুরলাস নামের এখই ডিজাইনের বল দিয়ে বিশ্বাকাপ খেলা হয়। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় খেলা হয় "ট্যাঙ্গো" বল দিয়ে।এই আসরে বলের কিছুটা রঙের ডিজাইনের সাথে সাথে সমাপ্তি ঘটে চামড়ার বল দিয়ে ফুটবল আসর। স্পেনে অনুষ্ঠিত ১৯৮২ আসলে খেলা হয় "ট্যাঙ্গো এরপানা" বল দিয়ে। ১৯৮৬ মেক্সিকো আসরে বল ছিলো " অ্যাজটেকা"। ইতালির ১৯৯০ এএ বিশ্বাকাপ আসরে ছিলো "এতরাস্কো ইউনিকো"। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৪ আসরে "কুয়েস্ত্রা", ফ্রান্সে ১৯৯৮ আসরে ছিলো " ট্রাই-কালার", ২০০২ সালে কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠিত আসরে ছিলো "ফিবারনোভা", ২০০৬ জার্মানির আসরে ছিলো " টিম-গাইস্ট", ২০১০ দক্ষিন আফ্রিকার আসরে "জাবুলানি", ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বাকাপে খেলা হয়েছে " ব্রাজুকা" এবং ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে ছিলো ১৯৭০ সালের প্রথম ডিজাইন করা টেলস্টার বল। ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন এনে নাম রাখা হয় "টেলস্টার-১৮"।

২০২২-এর কাতার বিশ্বকাপে খেলা হবে " আল-রিহলা" বল দিয়ে। যার বাংলা অর্থ যাত্রা। Adidas এর ডিজাইন বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন এই বলটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন। এভাবেই প্রতি আসরে বলের নাম, ডিজাইন আর কার্যকারিতায় আনা হয় যুগ উপযুগী পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিবর্তন রয়ে যায় ভক্তদের আড়ালে। ২০২৬ এর বিশ্বকাপে হয়তো আরও নতুন চমক দেখাবে Adidas। 


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন