২০২২ সালের ২২ তম ফুটবল বিশ্বকাপ আসরের আয়োজক দেশ কাতার। ৯২ বছর পর এই প্রথমবার মরুভূমির কোন দেশ ফুটবল বিশকাপ আয়োজনের সুযোগ পেলো। কথিত আছে কাতার আয়োজক দেশ হিসেবে অনুমতি পাবার জন্য ফিফাকে প্রচুর টাকা ঘুস হিসেবে দিতে হয়েছে। তবে এর সত্যতা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। তবে এটা সত্যি যে Greatest Show on Earth আয়োজন করতে কম ঘাম ঝড়াতে হয়নি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারকে। বৈরি আবহাওয়া এবং আধুনিক অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা এতো দিন পিছিয়ে ছিল কাতার। এসব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে এখন কাতারে হতে চলেছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জমকালো আয়োজন। কিভাবে করলো এসব অসম্ভব কাজ? এর পেছনে মূল অস্ত্র হিসেবে কজ করে ডলার। বিগত ২১ আসরের সর্বোচ্চ ব্যয় করে আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কাতার। খরচের পরিমান জানলে চোখ কপালে উঠে যাবে।
২০১০ সালে আয়োজক দেশ সাউথ আফ্রিকা খরচ করেছিলো ৩.৬ বিলয়ন ডলার। ২০১৪ সাতলের ব্রাজিল বিশ্বকাপে খরচ হয়েছিলো ১১.৬ বিলয়ন ডলার। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে খরচ হয় হয় ১৪.২ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরে আয়োজক দেশ কাতারের খরচ শুনলে চোখ কপালে উঠবে। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে কাতারের খরচ হচ্ছে ২২০ বিলয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। স্বভাবতই যার সিংহভাগ খরচ করা হয়েছে ফুটবলার এবং দর্শকদের জন্য। এবারের বিশ্বাকাপে ৩২টি দল কাতারের মরুর বুকে বল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াবে। যেহেতু কাতারে এর আগে কোন ফুটবল আসর অনুষ্ঠিত হয়নি তাই শুন্য থেকেই কাতারকে শুরু করতে হয়েছে। এক নজরে দেখে নেয়া যাক কোন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ক্রিকেটে ৯টি নতুন নিয়ম আসছে শীঘ্রই
> প্লেয়ারদের জন্য আধুনিক মানের হোটেল এবং বিশ্বমানের অনুশিলন সুবিধা। শুধুমাত্র দর্শকদের জন্য প্রতিটি স্টেডিয়ামের সমান আয়তনের ফ্যানজোন নির্মান করা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে শুধু এই খাতেই ব্যয় করা হয়েছে ৬ লাখ ৯৩২ কোটি টাকা।
> বিশ্বকাপের সময় যাতায়ত সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল বিশাল রাস্তা। দোহা, মেট্রো রেলসহ কয়েক হাজার বিশেষ বাস চলবে কাতারের রাস্তায়। শুধুমাত্র বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কাতারের বিমান বন্দরে নির্মান হয়েছে আলাদা টার্মিনাল। যোগাযোগ খাতে খরচ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।
> আয়োজনের বেশিরভাগ খরচ হয়েছে স্টেডিয়াম নির্মানে। দৃষ্টিনন্দন এসব স্টেডিয়ামে আধুনিকতার সর্বোচ্চটা ব্যবহার করেছে কাতার। আটটি স্টেডিয়াম নির্মান করতে ফুটবলার ও দর্শকদের সুবিধার কোন কিছুইতে কমতি রাখা হয়নি। অবাজ করা বিষয় হচ্ছে ৮টি স্টেডিয়াম পুরুপুরি শীতাত নিয়ন্ত্রিত। আধুনিক কুলিং প্রযুক্তি বাতাকে ঠান্ডা রাখার পাশাপশি রাখবে দূষন মুক্ত। স্টেডিয়াম নির্মান করতে খর করা হয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।
> জমকালো আয়োজনের কাতারের সবচেয়ে বড় চমকের নাম "লুসাইল সিটি"। অবাক করা হলেও সত্যযে শুধুমাত্র বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এই শহর গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্বে কাতার একমাত্র দেশ যারা বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে নতুন শহর গড়ে তুলেছে। ৩৮ কিলোমিটার আয়তনের এই শহর ফুটবল ফ্যান ও দর্শনার্থীদের নির্মান করা হয়েছে ২২টি হোটেল, গল্ফ ক্লাব, প্রাইভেট বিচ মরু ঝর্না, এডভেঞ্চার পার্ক সহ আধুনিক বিনোদনের সব সুযোগ সুবিধা। নতুন এই শহর তৈরিতে কাতার সরকার ব্যয় করেছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ১২ কোটি টাকা।
এসব আয়োজন বলে দেয় বিশ্বকাপ আয়োজন ছিলো কাতারের স্বপ্ন। যা বাস্তবে দিতে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টার কোন কমতি রাখেনি। সব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে কাতার যেনো ফিফাকে এক নতুন দিগন্তের সন্ধ্যান দিলো। এবার চোখে চোখ রেখে কাতার বলতে পারবেন, " আমরাও পারি"।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন