BPL এ Decision Review System নেই কেনো?
DRS বা Decision Review System। মূলত অনফিল্ট আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে সেই সিদ্ধান্তকে বেটার বা ফিল্ডার দল চ্যালেঞ্জ করে। DRS প্রযুক্তি সেই ঘটনার উপর প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান করে। এখন প্রশ্ন আসে এবারের BPL এ DRS প্রযুক্তি রাখা হয়নি কেনো? আইপিএল এর পরে বিপিএল ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসন। এত বড় আসরে DRS না থাকার কারন কি? DRS প্রযুক্তিকি অনেক ব্যয় সাপেক্ষ যার কারনে এবার বিপিএল আসরে DRS থাকছে না?
প্রথমে জেনে নেয়া যাক DRS প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে। মূলত DRS এ তিন ধরনের প্রযুক্তি থাকে Sniko বা Ultra-EDGE যেটা নির্ধারন করে বল ব্যাট বা অন্য কোথাও লেগেছে কিনা, দ্বিতীয়ত Hawk-Eye প্রযুক্তি LBW সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এবং তৃতীয়ত Hotspot প্রযুক্তি যেটা Intrared ক্যামেরার মাধ্যমে দুইটি বস্তুর ঘর্ষন স্থান চিহ্নিত করতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে Ultra EDGE এবং Hawk-Eye প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ ভুলের সমালোচনা নাকি সমালোচনায় ভুল | প্রশ্নবিদ্ধা বিপিএল
Ultra EDGE প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?
আমরা হয়তো অনেকে Oscilloscope যন্ত্রের সাথে পরিচিত বা না শুনেছি। তবে যারা ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস বা ফিসিক্স নিয়ে পড়াশোন করেছেন তারা এটি নিয়ে ল্যাব এ কাজও করেছেন। Oscilloscope এর কাজ মূলত ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালকে বিশ্লেষন করে সেগুলুকে তরঙ্গ আকারে প্রকাশ করা। Ultra EDGE যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সেটা হলো High Sensitive Microphone। মাইক্রোফনটি মাঝের স্টাম্পে লাগানো থাকে। এর কাজ মূলত ব্যাটম্যানের আশে পাশে থাকা বিভিন্ন দৈর্ঘের তরঙ্গকে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনালে রুপান্তর করা। এর সাথে Oscilloscope সংযোগ করা থাকে। এই Oscilloscope এ সে ইলেক্ট্রিক্যাল তরঙ্গ দৈর্ঘের একটা গ্রাফ তৈর করে। ক্যাচ আউট এবং এলবিডব্লিউ আউট রিভিউ করার হলে টিভি আম্পায়ার DRS পদ্ধতিতে Oscilloscope এর মাধ্যমে চেক করে বল ব্যাট বা খেলোয়ারের পেডে টাচ করেছে কিনা। যদি টাচ না করে তাহলে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগনাল ফ্লেট দেখায় আর যদি টাচ করে তাহলে সেখানে তরঙ্গ তৈরি হয়।
Ultra EDGE এর খরচ কেমন?
এখন প্রশ্ন আসতে পারে Ultra EDGE প্রযুক্তি কতটা ব্যয় সাপেক্ষ? ২০১৯ সালে Cricbuzz এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২৫ দিনের খেলার জন্য বিপিএল গভর্নিং কমিটিকে প্রতিদিন এক হাজার ডলার খরচের হিসেব দেয়া হয়েছিলো। সেই হিসেব অনুযায়ী ২৫ দিনে পরিশ হাজার ডলার। বর্তমান বাজারে ডলারের মূল্য হিসেব করলে প্রতিদিন খরচ পড়বে প্রায় এক লক্ষ টাকা।
Hawk Eye প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে?
Hawk Eye প্রযুক্তি মূলত তৈরি করা হয়েছিলো ব্রেইন সার্জারির জন্য এছাড়াও মিসাইলের গতি পথ নির্ধারন করার জন্য Hawk Eye প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। DRS System এ Hawk Eye প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ক্রিকেটে মূলত বলের গতু পথ নির্ধারন করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এলবিডব্লিউর মত কঠিন সিদ্ধান্তে Hawk Eye প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়। Hawk Eye প্রযুক্তিতে High Speed Vision Camera ব্যবহার করা হয় যা কমপক্ষে 60fps এ ভিডিও ধারন করা হয়। সাধারন ক্যামেরা 25-30fps এ ভিডিও ধারন করে। বিপিএল এবং বিগবেস৷ এর মত আসনে 300fps এর ক্যামেরা ব্যবহার করা। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ব্যবহৃত ক্যামেরা 30fps এর ভিডিও ধারন করতে পারে।
Hawk Eye প্রযুক্তির জন্য কমপক্ষে ছয়টা ক্যামেরার প্রয়োজন হয় যেগুলু মাঠের ছয় পাশে লাগানো থাকে। এই ছয়টা ক্যামেরা কাজ হচ্ছে বলার যখন বল ডেলিভারি করে তখন থেকে বলে গতি পথ নির্ধারন করা। বল কোথায় পড়লো কোথায় যেতে পারে সেই পথ নির্ধারন করা। তবে সামগ্রিকভাবে বলের গতি পথ কোন দিকে হচ্ছে কোথায় আঘাত করবে এটা ম্যান্যুরালি নির্ধারন করা হয়। একজন সিস্টেম এনালেটিক্স থাকেন যিনি ছয়টা ক্যামেরা ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ম্যান্যুয়ালি এই কাজটি করে থাকে। ম্যান্যুয়ালি করার কারন হচ্ছে একেক পিচের একেক বৈশিষ্ট্য থাকে। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পিচের ডাটা সংগ্রহ করে সেগুলুকে ক্যালকুলেশন করে তারপর বলের Hit Point নির্ধারন করেন।
Hawke Eye এর খরচ কেমন?
সেই ২০১৯ সালে Cricbuzz এর নিউস অনুযায়ী Hawke Eye প্রযুক্তির জন্য প্রতিদিন তিন হাজার ডলার খরচের কথা বলা হয়েছে আর ২৫ দিনের জন্য ৭৫ হাজার ডলার যা বর্তমান টাকায় হিসেব করলে প্রতিদিন তিন লক্ষ টাকা আর ২৫ দিনে ৭৫ লক্ষ টাকা।
এর অর্থ দাঁড়ায় Ultra EDGE ও Hawke Eye এর জন্য প্রতিদিন ৪ লক্ষ টাকা আর ২৫ দিনে ১ কোটি টাকা বা এর কিছু কম বেশি খরচ হবে। এটাকি বিসিবির জন্য খুব বেশি ব্যয় সাপেক্ষ যার কারনে এবারের বিপিএল এ DRS প্রযুক্তি থাকছে না? আসলে পৃথিবীতে মাত্র দুইটা প্রতিষ্ঠান এই Hawke Eye প্রযুক্তি সরবরাহ করে আর এখন যেহেতু বিশ্বে বেশ কয়েকটি লিগ চলছে তাই সবগুলু প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ব্যস্ত। যার ফলে বিসিবি এবার DRS প্রযুক্তির জন্য সিরিয়াল পায়নি। তবে বিসিবি চাইলে আগে থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে পারতো। কারন বিসিবিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দাবি করে IPL এর পর BPL বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট লীগ আসর।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন