ইন্টারপোল কি ও কেনো এতো শক্তিশালী?

The International Criminal Police Organisation (INTERPOL)


পুলিশ না হয়েও পুলিশের চেয়ে অধীক শক্তিশালী সংস্থাটি। ১৯২৩ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ১৯ দেশের প্রতিনিধি নিয়ে International Criminal Police Commission নামে প্রথম কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। ১৯৪৬ সালে এর নামকরন করা হয় ইন্টারপোল।  ইন্টারপোল হলো সারা বিশ্বের পলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

দূর্নীতি, যুদ্ধাপরাধ, অস্ত্র পাচার, সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং এমন ১৭ ধরনের অপরাধ তদন্তে সদস্য দেশগুলুকে সহায়তা করে থাকে ইন্টারপোল। জাতি সংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তর এই সংস্থার সদর দপ্তর ফ্রান্সের লিওনে। ইউরোপ আমেরিকাস বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ইন্টারপোলের সদস্য।  ইন্টারপোলের বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম আহমেদ নাসে আল-রাইসি। তিনি ইন্টারপোলের ৩০ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।


ইন্টারপোল কিভাবে কাজ করে?

এক সময় বড় ধরনের অপরাধ করার পর আইনের চোখে ফাকিব্দিয়ে দেশ ত্যাগ করলেই অপরাধী চলে যেতো ধরা ছোয়ার বাইরে। অপরাধীকে নিজ দেশে আর কোন ভাবেই ফিরিয়ে আনা যেতো না। কিন্তু ইন্টারপোল গঠিত হওয়ার পর থেকে অপরাধ করে পালিয়ে বেড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছে। একবার ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড লিষ্টে নাম উঠলে অপরাধীর জন্য পালিয়ে বেড়ানো বা গা ঢাকা দেয়া হয়ে ওঠে দু:সপ্ন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নানা ধরনের ইন্টেল সংবাদ সংগ্রহ করে সংস্থাটি।

ইন্টারপোলের সেন্ট্রাল ডাটা বেসে রয়েছে ১০০ মিলিয়নেরব বেশি ডাটা। অপরাধীর ছবি-স্ক্রেচ, ক্রিমিনাল প্রোফাইলে, ক্রিমিনাল রেকর্ড, জালিয়াতিসহ নানা ধরনের তথ্য রয়েছে সংস্থাটির হাতে। অপরাধ করার পর এক দেশের আসামী অন্য দেশে চলে গেলে সহায়তা চাওয়া হয় ইন্টারপোলের। সন্দেহভাজন অপরাধীর যাবতীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হয় রেড নোটিস জারির। অভিযুক্ত ব্যাক্তি যে দেশের নাগরিকয় হোক না কেনো যেখানে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেই দেশকেই আবেদন করতে হয় রেড নোটিস জারির।

রেড নোটিসকে বিবেচনা করা হয় আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানার সমতুল্য হিসেবে। ১৯৪৭ সালে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যার অপরাধে এক রাশিয়ান নাগরিকের বিরুদ্ধে প্রথম রেড নোটিস জারি করা হয়েছিল। রেড নোটিস ছাড়াও ৭ ধরনের সমন আছে ইন্টারপোলের। ২০১৯ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ৬২ হাজার রেড ও ১২ হাজার হলুদ নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল।

বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে ইন্টারপোলের সদস্য পদ হয়। ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে জন্ম এমন  ৬২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছে ইন্টারপোল। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধী, ২১ আগষ্ট গ্রেন্ড হামলা মামলায় সোজা প্রাপ্ত পলাতক আসামীদের নাম রয়েছে। 

বিশ্বের শক্তিশালী এই বাহিনীর সদর দপ্তর ১৯৮৬ সালে শিকার হয়েছিলো ভয়ঙ্কর বোমা হামলার। সংস্থাটির বর্তমান হেড কোয়ার্টার বল্ডিংটি বিশ্বের অন্যতম আধুনিক প্রযুক্তি ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে।

তবে বিশ্বের শক্তিশালী ও বৃহত্তর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে আছে গুরুতর অভিযোগ। কোন আদালত বা বিশ্বের অন্য কোন সংস্থার কাছে ইন্টারপোলকে কোন জাবাব দিহীতা করতে হয়না। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ অধিকাংশ সময়ে নানা দেশের সৈরাচারী সরকার তাদের বিরোধীদল দমনে ইন্টারপোলকে ব্যবহার করছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন