ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরে আল-আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র জায়গাগুলুর মধ্যে অন্যতম। মুসলিমদের কাছে মক্কা ও মদিনার পর আল-আকসা তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ইহূদীদের কাছে এটি টেম্পল মাউন্ট হিসেবে পরিচিত। ইহূদীরা মনে করেন এখানেই তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় জুইস টেম্পল বা ইহূদী মন্দির ছিলো। এবং তাদের তৃতীয় মন্দির এখানেই নির্মিত হবে। বর্তমানে এখানে থাকা ওয়েষ্টার্ন ওয়াল ইহূদীদের উপাসনার জন্য পবিত্র স্থান। খৃষ্টানরা বিশ্বাস করে যীশু খৃষ্ট এখানে থাকা দ্বিতীয় মন্দিরে ধর্ম প্রচার করেছেন। মুসলিমরা বিশ্বাস করে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) পবিত্র মেরাজের রাতে এখানে উপস্থিত ছিলেন এবং আল-আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করে ছিলেন।
তিন ধর্মের পবিত্র স্থান হলেও উগ্র ইহূদীরা আল-আকসা ভেঙে এখানে তাদের তৃতীয় মন্দির নির্মান করতে চায়। ইহূদীদের একটি উগ্র সন্ত্রাসবাদী দল আল-আকসা ভেঙে ইহূদী মন্দির নির্মান তৈরি পক্ষে কাজ করছে। আজ থেকে প্রায় দুইশ বছর আগে রোমানরা তাদের দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংস করে দেয়। ধ্বংসের আগ পর্যন্ত এখানেই ছিলো ইহূদীদের প্রধান উপাসনালয়। ১৯৪৭ সালে ইহূদী ইসরাইল সরকার জেরুজালেম নিয়ন্ত্রন নেয়ার পরেও একটি নীতিমালা অনুযায়ী আল-আকসায় শুধু মুসলিমরাই ইবাদত করতে পারবে এবং ইহূদীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ইহূদী উগ্রবাদী সংগঠন আল-আকসা ভেঙে মন্দির নির্মান কিরতে চায়। তাদের এই আন্দোলন " Temple Mount Movement" হিসেবে পরিচিত।
৩৪ বছর ধরে Temple Institute ইহূদী মন্দির পূন-নির্মান ও ইহূদী আচার অনুষ্ঠান পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তৃতীয় মন্দির দেখতে কেমন হবে তার আর্টিটেকচারাল মডেলও প্রকাশ করেছে। এই মন্দির নির্মানের জন্য তারা ইসরাইল সরকার, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদানও সংগ্রহ করছে। যেসকল ইহূদী আল-আকসায় প্রবেশ করে ইহূদী রীতি অনুযায়ী পশু জবাই করতে পারবে Temple Mount Movement এর পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক পুরষ্কার দেয়ারও ঘোষনা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এধরনের কাজ সাধারন ইহূদীদের বিবেচনায় উদ্ভট, পাগলামী এবং উগ্রবাদী আচরন হিসেবে বিবেচিত হত। তবে বর্তমানে এই উগ্রবাদীরাই ইসরাইল সমাজের মূল ধারায় পরিনত হয়েছে।
১০ বছর আগেও Temple Mount Movement এর কোন সদস্য ইসরাইল পার্লামেন্টের সদস্য ছিলো না। আর বর্তমানে Temple Mount Movement পন্থী ২০ জন পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছে। ২০০০ সাল পর্যন্ত মাত্র কয়েকজন ইহূদী আল-আকসায় প্রবেশ করতো। কিন্তু বর্তমানে এই আন্দোলন মূল ধারায় পরিনত হওয়ার কারনে প্রতি বছর লক্ষাধীক ইহূদী আল-আকসায় প্রবেশ করছে। আল-আকসা মসজিদে মুসলিমদের জন্য বন্ধ করে দেয়া, ইবাদতরত মুসলমদের উপর রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা এবং মসজিদ থেকে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার করা অনেকটা নিয়মতি ঘটনায় পরিনত হয়েছে।
যেহেতু সমগ্র জেরুজালেম শহর অবৈধ ইসরাইলের নিয়ন্ত্রনে তাই তারা মুসলিমদের আল-আকসায় প্রবেশে বাধা দিয়ে ইহূদীদের প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে। ১৯৬৭ সালে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইহূদীরা ফিলিস্তিনের যে সমস্ত অঞ্চল দখল করেছিলো তার মধ্যে সর্ব প্রথম অঞ্চল ছিলো হেব্রন। উগ্রবাদী উহূদীরা মুসলমানদের আরও একটি পবিত্র স্থান ইব্রাহিমী মসজিদ দখল করে নেয়।
ইসরাইলি পুলিশ ও সেনারা যেভাবে মুসলমাদের উপর আল-আকসায় যে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে কয়েক বছর পর হয়তো সমস্ত আল-আকসা মসজিদ ইসরাইলি দখল করে নিবে আর সেখানে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন