অ্যান্টার্কটিকা অসহনীয় ঠান্ডায় কিভাবে মানুষ বসবাস করে?



পৃথিবীতে মোট আটটি মহাদেশ রয়েছে যার মধ্যে ৭টিতেই মানুষের বসবাস। এ কথা আর নতুন কি। তবে আপনি হয়তো প্রথম শুনতে পারেন অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে কোন মানুষ বাস করে না। পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে। শীতকালে এর তাপমাত্রা -৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গরম কালেও তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে -১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  তাই সেখানে বরফ আর গলে না বরং প্রতি বছর ২ ইঞ্চি করে বাড়ে। বাতাসের আদ্রতা থাকে ০.০৩ শতাংশ। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের আয়তন গোটা আমেরিকা ও ভারতের সমান। মহাদেশটির ৯৮ শতাংশই বরফ। কোন কোন জায়গায় বরফের গভীরতা ৫ কিলোমিটার।


বরফের এই রাজ্যে মানুষের জীবন ধারন করা অসম্ভব। তবুও কিছু মানুষ এখানে বসবাস করছে। কেন বা কিভাবে সেখানে থাকেন তারা? উত্তর হলো গবেষনার জন্য। মুক্ত মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা কোন রাষ্ট্র এর মালিকানা দাবি করতে পারে না। তবে বিশ্বের ২৯টি দেশ এখানে নিজেদের গবেষনাগার স্থাপন করেছে।Amundsen Scott south pole station হলো অ্যান্টার্কটিকায় মার্কিন ঘাটি। গ্রীষ্মে এখানে ৫০ জন শীতকালে ৪৫ জন বিজ্ঞানী ও অন্যান্য মানুষ থাকেন। সেখানে যাওয়ার জন্য আকাশ পথ একমাত্র ভরসা। বছরে মাত্র তিন মাস সেখানে বিমান ওঠা নামানোর জন্য পাইলটদের বিশেষ প্রশিক্ষন নিতে হয়। মহাকাশ ও মহাশূন্য সম্পর্কিত গবেষনা অ্যান্টার্কটিকায় সবচেয়ে বেশি হয়। পৃথিবীর অন্য স্থানে বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প মায়ুমন্ডলকে মহাকাশ পর্যবেক্ষনের জন্য ঝাপসা করে দেয়। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকার বাতাসে আদ্রতা নেই বললেই চলে। তাই সেখান থেকে লাখ লাখ আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্র পর্যবেক্ষন করা সহজ। ২০১৯ সালে ব্ল্যাক হোলের আলোচিত ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে তা ধারনের পেছনে দক্ষিন মেরুর টেলিষ্কোপের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।


কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীর বাতাস কেমন ছিল, বাতাসে কি কি উপাদান ভেসে বেড়াতো, তার নমুন এন্টার্কটিকার বরফের গভীরে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বরফের গভীর থেকে সেসব নমুনা তুলে এনে প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের পৃথিবী সম্পর্কে ধারনা নেয়ার চেষ্টা করেন। এসন কাজের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও দেখভাল করেন তারা। আর গবেষনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেন। তবে তথ্য পাঠনো বা যোগাযোগ করার একমাত্র মাধ্যম ইন্টারনেট সেখানে দুর্লভ। কারন জনশূন্য স্থান হওয়ার সেখানকার আকাশে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটও নেই। মাত্র চারটি স্যাটেলাইট দক্ষিন মেরুর কাছাকাছি এলে দিনে তিন ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটের জন্য ইন্টানেটের দেখা পান সেখানকার মানুষ।


পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের চেয়ে অ্যান্টার্কটিকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পুর্ন আলাদা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মহদেশটি দূষন ও বর্জ্যহীন রাখা সব দেশের দায়িত্ব্য। এখানে সামান্য দূষন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও গবেষনার জন্য হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। তাই এখানে যা যা আনা হয় সব আবার ফিরিয়ে নিতে হয়। শীতকালে এন্টার্কটিকায় থাকার জন্য ৪৫ জনকে অনেক ভাজবিচার করে মনোনিত করা হয়। কারন ঐ সময়ে কেউ অসুস্থ হলে তাদের ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। তারপরেও কেউ কেউ উদবেগ, বিষন্নতা আর হোম সিকনেসে আক্রান্ত হন। সামান্য রসন নিয়ে এন্টার্কটিকার বৈরি পরিবেশে যারা থেকেছেন তা কেবল তারাই বুঝাতে পারবেন।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন