এক সময় বাঙালির বিনোদনের প্রাণ ছিলো বাংলা নাটক। পারিবারিক বন্ধন, ভালবাসা-বিচ্ছেদ, সামাজিক ঐতিহ্য, দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা হতো বাংলা নাটকে। প্যাকেজ নাটক থেকে শুরু করে বাংলা ধারাবাহিক নাটক দেখতে টিভির পর্দায় চোখ আটকে থাকতো নাটক প্রেমী মানুষ। হুমায়ন আহমেদের কোথাও কেউ নেই নাটক নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হুমায়ন আহমেদকে মুঠোফোনে অনুরোধ করেছিলেন বাকের ভাইকে ফাঁসি না দিয়ে কিভাবে নাটকের গল্প শেষ করা যায়। এসবই ছিলো বাংলা নাটকের প্রতি বাঙালির আবেগ। অথচ সেই আবেগ জৌলুস এখন বিদায় নিয়েছে বাংলা নাটক থেকে। নব্বই দশক ও তার পরেও কিছু নাটক যেভাবে বাঙালির হৃদয় স্পর্শ করেছে এখনকার নাটকের চিত্র একেবারেই উল্টো।
বর্তমান নাটকের কাহিনী, অভিনয় ও চরিত্রের মধ্যে নেই কোন সেতু বন্ধন। পোশাক পরিচ্ছেদে নেই শালীনতা। নাটকের ডায়লগের যেনো আরও দূর্ভিসহ অবস্থা। পোশাকের অশ্লিলতা, অশালীন ডায়লগ এবং গালাগালিতে পরিপূর্ন এসব নাটকে এখন ছয়লাভ স্যাটেলাইট টিভিসহ অনলাইন মিডিয়া প্লাটফর্ম। নাটকের নামেও রয়েছে রুচির পূর্ন অভাব। প্রখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যকাররা বলছেন রাতারাতি ভাইরাল হতেই এসব নিন্মমানের নামটক তৈরি করছে নামধারী পরিচালকরা এবং অভিনয় করাচ্ছে এমন সব শিল্পীদের দিয়ে যারা ভাইরাল হবার নেশায় বেকুল।
এসব অশ্লীল নাটকে ছেয়ে গেছে ওটিটি প্লাটফর্ম। ফেসবুক, ইউটিউবসব বিভিন্ন প্লাটফর্মে এসব নাটক ছড়িয়ে দেখা হচ্ছে। টাকা ইনকামের মোহ আর ভাইরাল হওয়ার নেশায় মক্ত থাকা অভিনেতা-অভিনেত্রী নিজেদের আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না। এসব নাটকের প্রধান দর্শক হচ্ছে উটতি বয়সী তরুন-তরুনীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন এমন কু-রুচি পূর্ন নাটকে মোহে পরে তাদের নৈতিক অবক্ষয় তৈরি হচ্ছে। এখনই এসব নাটক বন্ধের পদক্ষেপ না দিলে পরবর্তি প্রজন্মে নৈতিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা স্পষ্ট। সুতরাং দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এসন নিন্ম মানের নাটক-সিনেমায় লাগাম টানতে হবে।
এছাড়াও সচেতন হতে হবে অবিভাবকদেও। তার সন্তান সোস্যাল মিডিয়াতে কি দেখে বিনোদন নিচ্ছে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সন্তানদের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে। সুষ্ঠ বিনোদন সম্পর্কে তাদের ধারনা দিতে হবে। এই দুই মিলেই কেবল আমরা এমন অসুস্থ মিডিয়ার মায়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে পারবো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন