পৃথিবীর বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার জন্য মানুষ বিভিন্ন প্রকার স্যুট ব্যবহার করে। এসব স্যুট এমন ভাবে ডিজাইন ও ম্যানুফেকচার করা হয় যাতে সেই পরিবেশে স্যুট লাইফ সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশ কোনটি? নিঃসন্দেহে সেই জায়গাটি হলো মহাকাশ। কারন মহাকাশে নেই কোন বায়ুমন্ডল, অক্সিজেন। যেখানে কোন মধ্যাকর্ষন শক্তি কাজ করে না। রয়েছে উচ্চ ও নিন্ম তাপমাত্রার ঝুকি।
এই মহাকাশে স্পেস স্যুট ছাড়া কোন মানুষ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভয়ানক ভাবে মরা যাবে। এই পরিস্থিতিতে যেখানে মানুষের বেচে থাকা কোন সম্ভাবনা নেই সেখানে মানুষের প্রান বাচায় স্পেস স্যুট। কিন্তু কি দিয়ে এববগ কিভাবে তৈরি করা হয় এই স্পেস স্যুট? কেনইবা এর দাম ১৫০'শ কোটি টাকা? আজ এসব অজানা বিষয় আপনাদের জানাবো। স্পেস স্যুট সম্পর্কে বলার আগে জানা দরকার মহাকাশে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
মহাকাশে প্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো অক্সিজেন। মহাকাশে নভোচারীদের নিঃশ্বাস নেয়ার মত কোন অক্সিজেন নেই। মহাকাশে অক্সিজেন সরবরাহ করতে স্যুটের পেছনের চেম্বারে অক্সিজেন থাকে। অক্সিজেন গ্রহনের পর স্পেস স্যুট থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করার জন্য ও প্রাকৃতিক দুর্গন্ধ দূর বাইরে বের করার জন্য একটি Exhaust লাইন থাকে।
মহাকাশে দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে বায়ুমন্ডলীয় চাপ না থাকা। মানুষের শরীরে থাকা গ্যাস শরীরের অভ্যন্তর থেকে বাহিরের দিকে চাক সৃষ্টি করে। আবার পৃথিবীর চারপাশে থাকা বায়ুমন্ডল শরীরের ভেতরের দিকে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে যাকে বায়ুমন্ডলী চাপ বলা হয়। শরীরের অভ্যন্তরের চাপ ও বায়ুমন্ডলেয় চাপ পরস্পরকে শূণ্য করে দেয় ফলে আমরা স্থিতিশীলতা অনুভব করি। কিন্তু বায়ুমন্ডলে এই চাপ থাকে না। যার ফলে সেখানে শুধু শরীরে থাকা গ্যাসের চাপ কার্যকর হয় ফলে নভোচারীর হৃতপিন্ড, ফুসফুস, কিডনি ফেটে যাবে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্পেস স্যুটে অক্সিজেনের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলীয় চাপ সৃষ্টি করা হয়।
মহাকাশে তৃতীয় সমস্যাটি হলো তাপমাত্রা। মহাকাশে কোন নভোচারী যদি সরাসরি সূর্যের দিকে থাকে তাহলে তাপমাত্রা ১২০° ডিগ্রি এবং সূর্যের বিপরিত দিকে থাকলে তাপমাত্রা ১০০° ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। স্বভাবতই এই তাপমাত্রায় নভোচারী বেচে থাকা সম্ভব না। তাই স্পেস স্যুটের ভেতরে লিকুইড কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এজন্য একজন নভোচারী সর্ব প্রথম যে জামাটি পরিধান করে সেখানে কুলিং সিস্টেম সেট করা থাকে। এতে মূলত প্লাস্টিকের সূক্ষ সূক্ষ পাইপ থাকে। এই পাইপে সার্বক্ষণিক পানি প্রবাহ করানো হয়। সেই পানি প্রয়োজন অনুযায়ী ঠান্ডা ও গরম হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে নভোচারীর অবস্থানের উপর।
চতুর্থ সমস্যাটি হলো রেডিয়েশন, আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডল মহকাশ থেকে আসা সব রেডিয়েশন আটকে দেয়। ফলে ভূ-পৃষ্ঠে থাকা প্রাণী ও পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু মহাকাশে যেহেতু বায়ুমন্ডল নেই সেহেতু রেডিয়েশন একটি বড় সমস্যা। এই ক্ষেত্রে রেডিয়েশন আটকে দেয়ার কাজটি করে স্পেস স্যুটের ফেব্রিক্স। স্পেস স্যুটের ফেব্রিক্সে ১১টি পরত থাকে। এদের কাজ চাপ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা এবং রেডিয়েশন আটকে দেয়া। এছাড়া এতে রয়েছে ওয়াটার, ফায়ার ও বুলেট প্রুফ লেয়ার।
নাসা বর্তমানে যে স্পেস স্যুট ব্যবহার করছে সেটা ১৯৭৪ সালে ডিজাইন করে বানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেই ডিজাইনে তেমন একটা পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে বর্তমানে এই স্পেস স্যুট আরও বেশি আধুনিক ও কমপেক্ট করে ডিজাইন করা হচ্ছে। স্পেস স্যুটে কি কি থাকে এবং আধুনিক স্পেস স্যুট সম্পর্কে আলোচনা করা হবে দ্বিতীয় পর্বে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন