এডিস মশা কি ও ডেঙ্গুজ্বর কেনো এতো ভয়াবহ

Dengue fever



বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে এক বড় আতঙ্কের না ডেঙ্গু। গত ৯ জুলাই'২৩ বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ছয় জন মৃত্যু বরন করে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো৷ রাজধানী ঢাকা সহ দেশের ৫০টির বেশি জেলায় ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পরছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ২০১৯ সালকে ছাড়িয়ে যাবে। গত ৫ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন স্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ৫৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বের ১০০টি দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুকিতে আছে।


আরও পড়ুনঃ ফাসির দড়িতে মোম লাগানোর কারন কি?


১৭৭৯-৮০ সালে সর্বপ্রথম এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায় ডেঙ্গু মহামারি দেখা দেয়। ১৯০৬ সালে এডিস মশার প্রজাতি আবিষ্কার করা হয় যা ডেঙ্গু রোগের জীবানু বহন করে। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মশা রয়েছে এদের মধ্যে এডিস মশা সবচেয়ে ভয়াবহ। এ জাতের স্ত্রী মশা ডেঙ্গু নামে এক ধরনের ভাইরাস বহন করে মানুষের শরীরে ডেঙ্গুরোগ ছড়িয়ে দেয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের পাচটি ধরন রয়েছে এই পাচটি ধরনই ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হলেও সাধারন মশাও এই রোগ ছড়াতে সাহায্য করে। একটি সাধারন মশা কোন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানো পর অন্য কাওকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু হতে পারে।



বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম এডিস বাহিত ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ার ১০০টি দেশের প্রায় দুই শত পঞ্চাশ কোটি মানুষ ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে। তাদের মতে বছরে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এর মধ্যে আনুমানিক সাড়ে ১২ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। ডেঙ্গু ভাইরাসের বিবর্তন, বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তন, অপকল্পিত ও ঘন বসতিপূর্ন নগরায়ন, অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার কারনে এডিস মশার বংশ বিস্তার কিছুতেও কমানো যাচ্ছে না।



আমাদের শরীর যখন কোন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন  আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজে নিজেই ভবিষ্যতে সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা শক্তি অর্জন করে। পরিচিত ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা এই শক্তিকে বলে এন্টিবডি। কিন্তু বর্তমানে ডেঙ্গু জীবানুর ক্রস রিয়েকশনের কারনে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের এন্টিবডি কাজ করছে না৷ বরং এই কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার আক্রান্ত হলে ঐ রোগীর মারা সম্ভাবনা বেশি। ২০০৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গু রোগের কিছু লক্ষন প্রকাশ করেছিলো সেগুলু হলোঃ


☞ তীব্র পেটে ব্যথা

☞ মাত্রাতিরিক্ত বোমি হওয়া

☞ শরীরে অয়ানি জমে যাওয়া

☞ মুখে ও চোখের সাদা অংশে রক্ত জমাট বাধাগ্রস্থ 

☞ প্রচন্ড ক্লান্তি ও দূর্বলতা অনুভব করা

☞ লিভারের আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়া

☞ রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া


তবে ভাইরাসের গঠনগত পরিবর্তনের কারনে এসব লক্ষন ছাড়াও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমান সময়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগীদের মাঝে এসব লক্ষন খুব কমই দেখা যাচ্ছে। রোগের লক্ষনের উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। 



ডেঙ্গু জ্বরের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা এক সপ্তাহ থেকে দশ দিনের মধ্যি সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে ডেঙ্গু প্রভাবিত অন্যকোন উপসর্গ দেখা দিলে আক্রাত রোগী মারা যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে যেকারনে রোগী বেশি মারা যায় তা হল রক্তে প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট রক্তের এক ধরনের ক্ষুদ্র অণুচক্রিকা। এটি শরীরে রক্ত জমাট বাধতে ও রক্ত ক্ষরন বন্ধ করতে সাহায্য করে৷ একজন সুস্থ মানুষের প্রতি ১শ মি.লি রক্তে  প্লাটিলেটের সংখ্যা ১.৫ লাখ থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত হয়। এই প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোন প্রকার ক্ষত ও আঘাত ছাড়াই রোগীর রক্ত ক্ষরন হতে পারে।



ডেঙ্গু রোগের কোন প্রতিশেধক বা এন্টিভাইরাস নেই। এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি রোধ করাই এই রোগের প্রধান প্রতিশেধক। পৃথিবীতে ৫ ধরনের ডেঙ্গু ভেক্সিন নিয়ে গবেষণা চলছে। করেকটি ভেক্সিনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে ভেক্সিন আবিষ্কারের আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে এডিস মশা এডিস মশা নিধন ও বংশ বিস্তার রোধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এডিস মশা লোকালয়ে জন্মায়। নালায় জমে থাকা পানি, পরিত্যাক্ত বোতল, মাটির পাত্র, ডাবের খোসা, কাচ বা প্লাস্টিকের পাত্র এসবের জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মায়। এছাড়া ঘরে থাকা ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানি, ফুলের টব এবং বালতি অথবা অন্যান্য পানির পাত্রে ৫দিন পানি জমে থাকলে সেই পানিরে এডিস মশা জন্মায়।



ডেঙ্গু রোগে আক্রাত রোগীদের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেয়া কিছু পরামর্শ হলোঃ

☞ ডেঙ্গু ভাল না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে বিশ্বামে থাকতে হবে

☞ ডাবের পানি, শরবত তথা তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।

☞ রোগী খাদ্য গ্রহন করতে না পারলে শীরা পথে স্যালাইন দেয়া যেতে পারে।

☞ জ্বরের তীব্রতা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীর ঔষধ গ্রহন করা যেতে পারে।

☞ ব্যথা নাশক কোন ঔষধ গ্রহন করা যাবে না।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন