ফাসির দড়িতে মোম লাগানো হয় কেনো?

Hanging rope


ফাঁসি মানেই একটি জীবনের পরিসমাপ্তি। আর একটা জীবন যেখানে পরিকল্পিতভাবে আইনি প্রকৃয়ায় পরিসমাপ্তি হয় তখন সেই মৃত্যুকে কতটা সহজ করা যায় সেই বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে একজন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসির রায় হওয়ার পর তাকে কন্ডেম সেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হাইকোর্টের কিছু আইনজীবি এটাকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে রিট জারি করেছেন যাতে ফাঁসি কার্যকর নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সাধারন কয়েদিদের সাথে তাদের রাখা হয়। যাই হোক, আজ থেকে প্রায় এক শতাব্দীরও আগে ১৯০৮ সালে কেউ একজন নিজেই ফাঁসিতে ঝুলার ঠিক আগ মূহুর্তে জল্লাদকে জিজ্ঞেস করেছিলো ফাসির দড়িতে কেনো মোম লাগানো হয়। তিনি আর কেউ নন ভারতের ক্ষুদিরাম বসু। ব্রিটিস বিরোধী আন্দোলনে তিনি শহীদ হিয়ে ছিলেন।


ফাসির দন্ড প্রাপ্ত আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় ফাসির মাধ্যমে। ফাসির দড়িতে ঝুলার সময় ফাসির দড়ি যাতে ঠিক ঠাক ভাবে গলায় বসে যায় এবং খুব বেশি কষ্ট ছাড়া আসামি মৃত্যু বরন তারাতারি হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া হয়। তাই ফাসির দড়ি নরম ও পিচ্ছিল করার জন্য পদার্থ লাগানো হিয়ে থাকে। যেমন শব্রি কলা, তেল, মোম, ঘি ইত্যাদি। অমশ্রিন দড়িতে গলা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।



মৃত্যুদন্ড যেহেতু একটি প্রাণের সমাপ্তি সেহেতু মৃত্যুদন্ডকে শাস্তি হিসেবে দেয়া অনেকেরই ঘোর আপত্তি আছে। এজন্য মৃত্যুদন্ডকে শাস্তি হিসেবে দেয়ার প্রকৃয়া ধীরে ধীরে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইতমধ্যে পৃথিবী ১০৬টি দেশ থেকে মৃত্যুদন্ডকে রহিত করা হয়েছে। মাত্র ৫৬টি দেশে মৃত্যুদন্ড বহাল রয়েছে। ৫৬টি দেশের মধ্যে ২৮টি দেশে মৃত্যুদন্ড কাগজে কলমে উপস্থিত থাকলে বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় না। এদের মধ্যে বাংলাদেশ সহ আরও কিছু দেশ এখনও আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে।


এর পেছনে একটি গল্প আছে, ব্রুস ম্যান আর্থন নামের একজন কানাডিয়ান নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার মৃত্যুদন্ডের পর কানাডাতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া বা মৃত্যুদন্ডকে শাস্তি হিসেবে আর রাখা হয় নি। কারন ব্রুসম্যান আর্থার যে খুনের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিলো এবং যেভাবে খুনের তদন্ত করা হয়েছিলো উক্ত তদন্তের উপর ভিত্তি করেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তদন্ত নিয়ে কানাডার সাধারন জনগনের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি দেখা যায়। পরে পুলিশের দেয়া রিপোর্টে কিছু গড়মিল খুজে পাওয়া যায়। কিন্তু ততদিনে ব্রুসম্যানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে যায়।



এভাবে বিতর্কিত তদন্ত থেকে কাওকে ফাঁসি দেয়া এটা যে কারও সাথে হতে পারে। আর এই চিন্তা কানাডার সাধারন নাগরিকদের জন্য ছিলো মানষিক হুমকিসরূপ। যা কানাডার আইন প্রনেতাদের উপরেও পরেছিলো। আর এর ফলে কানাডাতে মৃত্যুদন্ড রহিত করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ আইনের প্রয়োগের দিক থেকে কঠোর হলের মৃত্যুদন্ডকে সর্বোচ্চ শাস্তি থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা করছে। কারন পৃথিবীতে এমন অনেক উদাহরন আছে কয়েদিরা বছরের পর বছর ভুল তদন্তের কারনে বিনা দোষে কারাবাস করছে ও অনেকে সরবোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছে ও দন্ড কার্যকর করা হয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন