আমাদের সৌর জগতের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ হচ্ছে শনি। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় কেনো? আপনি এক কথায় উত্তর দিতে পারবেন, শনির বলয়ের কারনে গ্রহটিকে এতো সুন্দর দেখায়। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, শনির এই বলয় কিভাবে তৈরি হলো? আবার এই বলয়ে কয়েক ধরনের রঙ কেনো দেখা যায়? আজকের ভিডিওতে জানবো শনির গ্রহের বলয় কিভাবে তৈরি হয়েছে এবং তার বলয়ে কেনো রঙের ভিন্নতা? ভিডিও শুরু করার আগে অনুরোধ করবো আপনি যদি জানা অজানাতে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে জানা অজানা চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি ক্লিক করবেন।
১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও সর্ব প্রথম শনির বলয় আবিষ্কার করেন। শনি ছাড়াও জুপিটার, ইউরেনাস ও নেপচুনেরও বলয় রয়েছে। তবে এদের বলয় আবিষ্কার করা হয়েছে অনেক পরে। কারন এদের বলয় ততটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু শনির বলয় খুবই স্পষ্ট, কারন এতে রয়েছে বরফ খন্ড। এই বরফ থেকে আলো অনেক বেশি প্রতিফলিত হয় যার ফলে শনির বলয়কে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত শনি গ্রহের ৮২টি উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে ধারনা করা হয়, এখন শনির গ্রহের যে কয়টি উপগ্রহ রয়েছে, আজ থেকে ১০ থেকে ১০০ মিলিয়ন বছর আগে একটি উপগ্রহ বেশি ছিলো। যে উপগ্রহটি ছিলো শনির খুব কাছাকাছি এবং সম্পুর্ন বরফের তৈরি। এই উপগ্রহটি এক সময় শনির এতোটাই কাছে চলে আসে, যার ফলে এটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে বলয় তৈরি করে শনির চারপাশে ঘুরতে থাকে। এখন প্রশ্ন আসে কোন শক্তি বা বলের কারনে শনির উপগ্রহ ভেঙে গিয়ে এভাবে বলয় তৈরি করলো?
সৌর জগতের প্রত্যেকটি গ্রহ ও উপগ্রহ তাদের মাধ্যাকর্ষন বল দ্বারা প্রভাবিত হয়। গ্রহ ও উপগ্রহটির যে অংশ কাছাকাছি থাকবে সে স্থানে মাধ্যাকর্ষন বলের প্রভাব বেশি পরবে। ফলসরূপ উপগ্রহটির গোলাক্রিতির শেপ পরিবর্তন হয়ে কিছুটা চেপ্টা আকৃতি ধারন করবে। কোন গ্রহের উপগ্রহ যদি সলিড সার্ফেস হয় থাহলে এর শেপের পরিবর্তন খুব বেশি অনুভব করা যাবে না। কিন্তু যদি কোন উপগ্রহ তার গ্রহের দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হতে থাকে তাহলে এটি আসতে আসতে চেপ্টা হয়ে যাবে এবং এক সময় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গ্রহের চারপাশে ঘুরতে থাকবে। যে বলের প্রভাবে একটি উপগ্রহ তার গ্রহের দিকে অগ্রসর হয় তাকে বলা হয় ডাইডাল ফোর্স। আর যতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করার পর উপগ্রটি ভেঙে যাবে তাকে বলে রুস লিমিট।
এই ডাইডাল ফোর্স ও রুস লিমিটের কারনে, কোন এক সময়, শনি গ্রহের কাছের উপগ্রহটি ভেঙে শনির চারপাশে ঘুরতে থাকে এবং বলয় তৈরি হয়। শনির গ্রহের বলয় ভালভাবে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় বলয়ের ভেতরের দিক সমান ভাবে বিসতৃত এবং বাইরের দিকে পাহাড়ের মত উঁচু প্রাচীর রয়েছে, যা প্রায় তিন কলোমিটারের মত উঁচু। একইভাবে যেকোন গ্রহের উপগ্রহ ডাইডাল ফোর্সের প্রভাবে যদি রুশ লিমিট অতিক্রম করে তবে উপগ্রটি ভেঙে গিয়ে ঐ গ্রহের চারপাশে বলয় তৈরি করবে।
চাঁদ আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবী ও চাঁদ একে অপরের মাধ্যাকর্ষন বল দ্বারা প্রভাবিত। তাহলেকি চাঁদ ডাইডাল ফোর্সের প্রভাবে রুশ লিমিট অতিক্রম করে পৃথিবীতে বলয় তৈরি করবে? পৃথিবী ও চাঁদের রূশ লিমিট ৯৪৯২ কিলোমিটার। চাঁদ যদি কোনভাবে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের ৯৪৯২ কিলোমিটারের ভেতরে চলে আসে, তাহলে চাঁদ ভেঙে গিয়ে পৃথিবীর চার পাশে বলয় তৈরি করবে। কিন্তু এমনটা ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই। চাঁদ পৃথিবী থেকে গড়ে ৩৮৪৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। চাঁদ পৃথিবী থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪ সেন্টিমিটার দূরে সরে যাচ্ছে। শনি গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন