মহাকাশের সবই অতীত তাহলে বর্তমান কি?




আমাদের দৃশ্যমান কোন কিছুই বর্তমান নয় বরং সবই অতীত। কথাটা শুনে আপনি হয়তো অস্বস্তি বোধ করছেন। আসলেইকি সব অতীত বর্তমান বলতে কিছু নেই? অসীম মহাকাশ নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষ নেই। আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করি এই পৃথিবীর সহস্য এখন পর্যন্ত সম্পূর্ন উন্মুচন করা সম্ভব হয়নি। উদাহরন হিসেবে বলা যায় বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের মাত্র ৫ ভাগ জানতে সক্ষম হয়েছে। মাইরিয়ানা ট্রেন্সের গভীরে কি আছে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। পৃথিবীর কেদ্রে পৌছতে এখনও বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ। তবে বিজ্ঞানের কল্যানে পৃথিবীর গভীরতা থেকে অসীম মহাশূন্য সম্পর্কে আমরা অনেক অজানা কিছু জানতে পেরেছি। তবে আমরা যা জেনেছি বা জানতেছি তার সবইকি বর্তমান ঘটনা নাকি অতীত।



আরও পড়ুন: স্পেস স্যুটের দাম ১৫'শ কোটি টাকা, কেনো?



খুবই পরিচিত এবং সহজ উদাহরন দিলে একটু ভাল ভাবে বোঝা যাবে। আকাশে যখন মেঘ জমে ও বৃষ্টি হয় তখন বিদ্যুৎ চমকায়। মেঘের ঘর্ষনে বিদ্যুৎ চমকালে  যে আলো সৃষ্টি হয় তা আমরা দেখতে পাই। কিন্তু আলোর সাথে সাথে আমরা শব্দ শুনতে পাইনা। শব্দ কয়েক সেকেন্ড পরে শুনি। এর কারন হচ্ছে আলোর চেয়ে শব্দের গতি অনেক কম। আলো প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। তবে যদি আলোর ও শব্দের গতি সমান হতো তাহলে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো ও শব্দ এক সাথে শুনতে পেতাম। এইযে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো দেখতে পাওয়া, শব্দ শুনতে পাওয়া এসবই কিন্তু অতীত। কারন এসবামাদের কাছে আসতে কিছুটা সময় লেগেছে আর যতটুকু সময় লেগেছে সেই সময়ই হচ্ছে ঘটনার অতীত।




সূর্য্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। আমরা ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পরের সূর্য্য দেখতে পাই। সূর্য্যের যে আলো আমরা ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড পরে দেখতে পাই তা কিন্তু ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে উৎপন্ন হয়েনি। সূর্য্যের যে আমাদের কাছে পৌছায় তা তৈরি হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার বছর আগে। তার মানে সূর্য্যও আমাদের কাছে অতীত। আজ থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে ডায়নোসর বাস করতো। যদি পৃথিবী থেকে ৬৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে এমন কোন গ্রহ থাকে যেখানে খুবই প্রযুক্তি সম্পন্ন এলিয়েন বাস করে। আর তারা যদি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ আবিষ্কার করে আমাদের পৃথিবীকে দেখতে পারে তাহলে তারা বর্তমান মানব সভ্যতা দেখতে পাবে না। বরং তারা ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে বিচরন করা ডায়নোসরদের দেখতে পাবে। বিষয়টি আপনার কাছে কাল্পনিক কথা মনে হলেও এটাই বাস্তব।




আকাশে আমরা যেসব তারা দেখতে পাই তা কিন্তু তারার অতীত অবস্থা। তারা থেকে আলো আমাদের পৃথিবীতে আসতে লক্ষ কোটি বছর লেগে যায়। এমনও হতে পারে যে তারার আলো আমরা দেখছি সেই তারাটি হয়তো এখন আর নেই। অর্থাৎ তারার আলো পৃথিবীতে আসার সময়ের ব্যবধানে সেই তারার মৃত্যু ঘটেছে। ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর নাসা মহাকাশে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ স্থাপন করে। আর এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সাহায্যে ১৩৫০ কোটি বছর আগে ছবি ক্যাপচার করেছে। হাবল টেলিস্কোপ দিয়েও বিগব্যাঙ্গের মাত্র ৪ শত বছর পর ইউভার্সের অবস্থা কেমন ছিলো তা দেখতে পেরেছি। তবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পরিস্কার, রঙিন এবং ডিলেইলিং ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।




আমরা যখন কোন ঘটনা দেখতে পাই তা আমাদের মস্তিস্কে অনুভুতি সৃষ্টি করতে ৮০ মিলি সেকেন্ড নেয়। অর্থাৎ আমাদের খুব কাছে ঘটে যাওয়া ঘটনাও আমাদের কাছে অতীত। প্রকৃত পক্ষে বর্তমানকে দেখা বা অনুভব করার আমাদের পক্ষে কোন দিনও সম্ভন না। তার মানে মহাকশে আমরা এখন যা দেখতে পাচ্ছি তা প্রকৃত পক্ষে মহাকাশের অতীত অবস্থা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন