চাঁদের পৃষ্ঠে সফ্ট ল্যামন্ডিং বা চাঁদের বুকে সফলভাবে কোন ল্যান্ডার ল্যান্ড করানোর দিক থেকে ভারত পৃথিবীর ৪র্থ দেশ। আজ (২৩ আগষ্ট'২৩) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টা ১৫ মিনিটে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম সফলভাবে চাঁদে অবতরন করে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ে ও চিনের পর চাঁদের বুকে ভারত নিজেদের পতাকা উড়ানো গৌরব অর্জন করেছে। ৪০ দিনের এই চন্দ্র অভিযানে ভারতের মহাকাশ গবেষনা সংস্থা ISRO এই সফল অভিযান পরিচালনা করছে। কেনো ভারতের চন্দ্র অভিযানে ৪০ দিন সময় লেগেছে তা আলোচনা হবে আর্টিকেলের শেষ ভাগে।
আরও পড়ুনঃ স্পেসক্রাফট এতো গত পায় কিভাবে? Planetary Slingshot Explain
প্রথমে আলোচনা করা যাক কিভাবে চন্দ্রযান-৩ স্পেস ক্রাফ্ট চাঁদের বুকে ল্যান্ড করেছে। প্রথমে চন্দ্রযান-৩ স্পেস ক্রাফ্ট রকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর লোয়ার অর্বিটে আনা হয়। এরপর স্পেস ক্রাফ্টটি লোয়ার অর্বিটে থেকে পৃথিবীকে পদক্ষিন করতে থাকে। পৃথিবীর চারদিকে ঘুরতে থাকা চন্দ্রাযানকে চাঁদের অর্বিটে নিয়ে যাওয়ার জন্য Planetary Slingshot বা Gravity Assist এর সহায়তা নেয়া হয়। চন্দ্রযানটি যখন অর্বিটের সময় যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে তখন চন্দ্রযানের বিপরিত দিক থেকে ইঞ্জিন ফায়ার করে এর গতি বাড়ানো হয়। ফলে চন্দ্রযানের অর্বিটের বিস্তৃতি বেড়ে যায়। এভাবে মোট ৫বার পৃথিবীর Gravity Assist করে চাদের যাওয়ার জন্য যথেষ্ট গতি অর্জন করে। এভাবে ১৭ দিন পৃথিবীকে অর্বিট করার পর ৫ম বার Gravity Assist করার পর চন্দ্রাযানটি চাঁদের দিকে যাত্রা শুরু করে।
চন্দ্রযান চাঁদের অর্বিটে পোছানোর পর এর গতি কমানোর প্রয়োজন হয়। গতি কমানোর জন্য চন্দ্রযান যখন চাঁদের সবচেয়ে কাছে আসে তখনই গতির দিক বরাবর ইঞ্জিং ফায়ার করা করা যায়। এভাবে চাঁদের সাপেক্ষে চন্দ্রযানের অর্বিটের বিস্তৃতি কমে যায়। মোট ছয়বার অর্বিটাল ইঞ্জিন ফায়ারের পর চন্দ্রযানটি চাঁদের স্থিতিশীল অর্বিটে চলে আসে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তন করার সরার সময় চন্দ্রযানের ইঞ্জিন বন্ধ ছিলো। শুধু মাত্র পৃথিবীর কাছে আসার পর ইঞ্জিন চালু করে Slingshot এর জন্য ফায়ার করা হয়। চন্দ্রযানটিকে চাঁদে স্থিতিশীল অর্বিটে আনার জন্যও একই কাজ করা হয়।
চন্দ্রযান যখন স্থিতিশীল কক্ষপথে ঘুরতে থাকে তখনই চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে ২৫ কিলোমিটার উপর থেকে চন্দ্রাযান থেকে ভিক্রম ল্যান্ডারটি আলাদা হয় যায় এবং অর্বিটাল রেডিয়াস কমিয়ে চাঁদের কাছা কাছি যেতে থাকে এসময় লুনার অর্বিটাল নিজের অরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে চাঁদের দক্ষিন মেরুতে সফ্ট ল্যান্ডিং করে। চাঁদের পৃষ্ঠে বিক্রম ল্যান্ডারের সময়সীমা ১ চন্দ্র দিবস বা পৃথিবীর ১৪ দিন। চাঁদের দক্ষিন মেরুতে তাপমাত্রা অনেক কম তাই। যতক্ষন পর্যন্ত চাঁদে সূর্য্যের আলো থাকবে এবং বিক্রম ল্যান্ডারে চাঁদের আলো থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত বিক্রম সক্রিয় থাকবে।
এবার বলা যাক কেনো চাঁদে যেতে ভারতের এতো দিন সময় লাগলো?
ভারত যত কম খরচে এই চন্দ্র অভিযান সফল করেছে তা আমাদের কল্পনাকেও হার মানাবে। ভারদের Chadrayaan-3 অভিযানে মোট খরচ হয়েছে মাত্র ৭৫ মিলিয়ন ডলার। এতো কম খরচে ভারতই একমাত্র দেশ যারা চন্দ্র অভিযান সফল করেছে। আগেই বলেছি চন্দ্রযান মোট পৃথিবীর Gravity Assist বা Slingshot এর মাধ্যমে চাঁদে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট গতি অর্জন করে চাঁদের দিকে যাত্রা করে। চন্দ্রযানে যে রকেট ব্যবহার করা হয়েছে সাধারন রকেটের তুলনায় কম শক্তিশালী। ফলে এই Gravity Assist বা Slingshot ব্যবহার করা হয়, ফলে চন্দ্র অভিযানের খরচ অনেক কমে যায়। ISRO (Indian Space Research Organization) সব চন্দ্র অভিযান ছাপিয়ে এই জায়গাটিতে সফল। ISRO তাদের চন্দ্র অভিযানে Planetary Slingshot ব্যবহারের মাধ্যমে কয়েক গুণ খরচ কমিয়ে আনে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন