আমাদের ধারনা চাঁদ পৃথিবীর একটি মাত্র উপগ্রহ অবশ্য এই ধারনা সঠিক ছিলো ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত। কারন ১৯৫৭ সাল থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো শুরু হয়েছিলো। ১৯৫৭ সালে ৪ অক্টোবর স্পূটনি-১ এর মাধ্যমে মানুষের স্পেস মিশন শুরু হয়। অ্যাপোলো-১১ এর মাধ্যমে মানুষ প্রথম চাঁদের অবতরন করে। তবে চাঁদে অবতরনের এই সাফল্য এমনি এমনি আসেনি। নাসা তাদের চন্দ্র মিশনের শুরুতেই ৩ জন অভিজ্ঞ এষ্টোনট মারা যায়। তারা হলেন Ed White, Gus Grissom, Roger Caffee। তাদের মৃত্যু কিভাবে হলো, চন্দ্র মিশনে ব্যবহৃত অ্যাপোলো স্পেসক্রাফট নামের পেছনে ১১ কেনো যুক্ত করা হয়েছিলো আজকের আর্টিকেলে এমনই অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Ed White, Gus Grissom, Roger Caffee তারা কিভাবে মারা যান। এ বিষয়ে যাওয়ার আগে অ্যাপোলো মিশনে ব্যবহৃত স্পেসক্রাফট সম্পর্কে যানতে হবে। অ্যাপোলো স্পেসক্রাফটের তিনটি অংশ, Lunar Module, Command Module এবং Service Module। Lunar Module চাঁদে অবতরন করে Command Module এ এস্ট্রোনট অবস্থান করে এবং Service Module চাঁদের চারদিকে প্রদক্ষিন করে। এই তিনটি অংশের মধ্যে একমাত্র Command Module পৃথিবীতে ফিরে আসে। এবার অ্যাপোলো মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাক।
আরও পড়ুন: সূর্য্যের আলো নিভে গেলে কি হবে?
তিনজন এস্ট্রোনটকে কিভাবে চাঁদে পাঠানো যায় এটাই ছিলো অ্যাপোলো মিশনের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু অ্যাপোলো মিশন একটি মারাত্মক দূর্ঘটনা দিয়ে শুরু হয়। এস্ট্রোনটদের চাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাসা একটি Command Module তৈরি করে এবং বিভিন্নভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকে। এই পরিক্ষারই একটা অংশ ছিলো স্পেসস্যুট পরিক্ষা করা। ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি স্পেস স্যুট পরিক্ষা করার জন্য এই তিনজন এস্ট্রোনটকে স্পেস স্যুট পরিয়ে Command Module এ বসানো হয়। তাদের বসানোর জন্য পরিক্ষা শুরু করা হয় মূহূর্তেই Command Module এ আগুন লেগে যায়। Command Module এ ১০০ ভাগ অক্সিজেন থাকায় তিনজন এস্ট্রোনট সাথে সাথে মৃত্যুবরন করেন। এরপর অ্যাপোলো মিশন চরমভাবে সমালোচনার মুখে পরে। যার ফলে পরবর্তিতে অ্যাপোলো-২, অ্যাপোলো-৩, অ্যাপোলো-৪, অ্যাপোলো-৫ ও অ্যাপোলো-৬ এগুলিকে অন্য নামে পরিচালনা হয়।
১৯৬৮ সালের ১১ অক্টোবর অ্যাপোলো-৭ মিশন অফিসিয়াল নামে পরিচালনা করা হয়। অ্যাপোলো-৭ মিশনে Command Module এ ডিজাইনে পরিবর্তন করা হয়। যেখানে ১০০ ভাগ অক্সিজেনের পরিবর্তে ৬০ ভাগ অক্সিজেন ও ৪০ ভাগ নাইট্রোজেন রাখা হয়। যা ছিলো তুলনামূলক নিরাপদ। মডিউলে ব্যবহৃত তারে আগুন নিরোধক কোডিং দেয়া হয়, ন-ফ্লেমেবল ফেব্রিক দিয়ে স্পেসস্যুট বানানো হয়, মডিউলে প্রবেশ ও নির্গম্ন পথ এমন ভাবে তৈরি করা হয় যা মাত্র ৭ সেকেন্ডে খোলা যায়। অ্যাপোলো-৭ এর তিনজন এস্ট্রোনট সফলভাবে স্পেসে যান এবং সেখানে তারা নেভিগেশন, ডকিংসহ বিভিন্ন বিষয় প্রেকটিস করে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে। তবে এই সময়টিতে Lunar Module তৈরির প্রকৃয়ার কাজ চলছিলো।
এভাবে পর্যায়ক্রমে অ্যাপোলো-৮, অ্যাপোলো-৯, অ্যাপোলো-১০ মিশন পরিচালনা করা হয়। অ্যাপোলো-১১ মিশনের জন্য এই আগের তিনটি মিশনের মাধ্যমে চাঁদ, চাঁদের অর্বিটাল অবস্থা, গ্রাভিটি ইত্যাদিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন পরিক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। অ্যাপোলো-১১ মিশনে অ্যাপোলো-৮, অ্যাপোলো-৯, অ্যাপোলো-১০ কিভাবে ভূমিকা রেখেছিলো তা নিয়ে অন্য একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আমাদের অনেকেরই একটা ভুল ধরনা রয়েছে। নিচে পৃথিবীর যে ঐতিহাসিক ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন অনেকের ধারনা এই ছিবটি অ্যাপোলো-১১ মিশনের সময় চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে তোলা হয়েছে। আসলের এই ছবিটি তোলা হয়েছিলো অ্যাপোলো-৮ মিশনে।
Image source: Wikipedia |
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন