কিম জং উনের ট্রেন কতটা "রহস্যময়"?

যুদ্ধ জাহাজের মত ভারী অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে সাজানো কিম জং উনের ভ্রমন ট্রেন



উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন যেকোন দেশের শাষকের থেকে সম্পূর্ন আলাদা। তিনি একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিতি সব সময় তার কর্মকান্ডের জন্য বিশ্ব আলোচনার শীর্ষে থাকে। কিম নিজের নিরাপত্তার জন্য যত টাকা খরচ সেই টাকা হয়তো ছোট কয়েকটা দেশের বার্ষরিক বাজেট হতে পারে। আজ জানাবো কিনম জং উনকে বহনকারী ট্রেন টিয়াংহো ট্রেনের অজানা রহস্য। যা জানলে আপনি সত্যি অবাক হতে বাধ্য হবেন।



টিয়াংহো ট্রেনের জানালো শক্তিশালী বুলেট প্রুফ গ্লাস দিয়ে তৈরি। এই ট্রেনের প্রতিটা কক্ষ এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ভয়ঙ্কর বিষ্ফরনেরও কোন ক্ষতি না হয়। টিয়াংহো অতিরিক্ত বগিতে ভারী অস্ত্র বহন করা হয়। যাতে যেকোণ আক্রমনের বিরুদ্ধে যেকোন সময় লড়াই করতে পারে। এই ট্রেনে এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ও দুইটি মেশিন গান বহন করা হয়। এতে ট্রেনের দুপাশ থেকে আসা যেকোন আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যদি কিমকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে বগিতে বহন করা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কিমকে নিরাপদ যায়গায় নিয়ে যায়। এসব অস্ত্র-সস্ত্র কিমকে নিরাপদ রাখার সাথে সাথে ট্রেনকে বেশ ভারী করে তোলে। যার কারনে ট্রেনের গতি অনেক কমে যায়। উত্তর কোরিয়ার রেলওয়ে ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার টিয়াংহো মাত্র ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় চলতে পারে।



টিয়াংহো যখন অন্য কোন স্টেশন দিয়ে যায় তখন সেই ষ্টেশনের সকল রেলওয়ে ট্রেকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর কোরিয়ায় ২০টি রেলওয়ে ষ্টেশন আছে যেগুলু শুধুমাত্র এই একটা ট্রেনের জন্যই তৈরি করা হয়েছিলো। কিম যখন ট্রেনে কোন দেশ ভ্রমন করেন তখন দেশ পরিচালনা করার জন্য সকল ব্যবস্থা এই ট্রেইনেই করা থাকে। টিয়াংহো একটা অফিস কক্ষ আছে যেখানে ল্যাপটপ, টিভি, ফ্যাক্স মেশিন, স্যাটেলাইট এবং একটা মানচিত্র রয়েছে। এছাড়াও আছে মিটিং ও রিসিভশন রোম। টিয়াংহো বেশিরভাগ কক্ষ সাদা আর কাঠের মেঝে দিয়ে তৈরি। টিয়াংহো ট্রেনের বিশেষত্ব হলো এতে থাকা রেস্টুরেন্ট। যেখানে কোরিয়ান, রাশিয়ান, চাইনিস, জাপানিজ, ফরাসি সহ প্রায় সব ধরনের স্বুসাদু খাবার তৈরি করা হয়। যাত্রা করার সময় কিম যাতে মোটেও বিরক্ত না হয় এজন্য রয়েছে আরও বিশেষ ব্যবস্থা। এই ট্রেনে সব সময় একজন গাইকার ব্যবস্থা থাকে। যেকিনা কিমকে গান গেয়ে শোনায়। ট্রেনের যাত্রা শেষ হলে ট্রেনে থাকা ২টা মার্সিটিং লিমোসিন গাড়ি বের করা হয় বাকি রাস্তা পার করা করার জন্য।



কিমের পরিবারের এমন ট্রেন যাত্রার এক লম্বা ইতিহাস আছে। কিমুজিন প্যালেসে কিম ইল সাং এবং কিম জং ইলকে দাফন করা হয়েছিল। পাশেই তাদের ব্যবহার করা একটা ট্রেনের বগিও রাখা আছে। কিম জং ইলের একটা ছবিও টাঙ্গানো আছে ই ট্রেনের পাশে। ছোট ছোট লাইট দিয়ে বানানো একটা ম্যাপ দিয়ে দেখানো হয়েছে তারা কোথায় কোথায় ভ্রমন করেছিলো। মূলত কিমের পরিবার এক প্রকার নিরাপত্তার জন্যই ট্রেনের ব্যবহার শুরু করা হয়েছিলো। কারন কিম জং ইল বিমানে ভ্রমন করতে ভয় পেতেন। ২০০১ সালে প্রায় ১ মাস ধরে তিনি একটানা ট্রেন ভ্রমন করেছিলেন। ২০ হাজার কিলোমইটার লম্বা পথ পারি দিয়ে তিনি রাশিয়ার মষ্কোতে গিয়েছিলেন। কন্টাস্টিং নামে একজন রাশিয়ান কর্মকর্তা পুরু সময় ধরে তাকে সঙ্গ দিয়ে ছিলেন। পরে সে কর্মকর্তা পুরু সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বয় লেখেন। সে বই প্রকাশের আগ পর্যন্ত কেউ উত্তর কোরিয়ার নেতাদের ট্রেনের বেপারে খুব বেশি কিছু জানতো না। কখনও বলা হত না ট্রেনগুলু কোথায় আছে ও বা কোথায় যাবে। এই ট্রেনে ভেতরে কি কি থাকতে পারে তাও কেউ জানতো না।



এতো সতর্ক হয়ে চলার কারন হলো ২০০৪ সালে কিম জং ইলের ট্রেন চিনের সিমান্তের কাছাকাছি ইম চং স্টেশন অতিক্রম করার কয়েক ঘন্টা পরেই সেখানে একটা বিষ্ফোরন ঘটে। এই বিষ্ফোরনে ১৬০ জন মানুষ মারা যায় ও ৬০ জন আহত হয়। ধারনা করা হয় সেই স্টেশনে থাকা একটা তেলবাহী ট্রেনের উপর বৈদ্যুতিক তার এসে পরার এই বিষ্ফোরন ঘটেছিলো। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এটা ছিলো কিম জং ইলকে হত্যার চেষ্টা। উত্তর কোরিয়াতে অনেক থেকেই ক্ষমতার জন্য হত্যা করার ইতিহাস ছিলো। এই ঘটনার পর ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। ২০০৯ সালে রাশিয়া ভ্রমনের সময় রাশিয়ার ফটোগ্রাফারদের ট্রেনের ছবি তুলতে নিষেধ করা হয়েছিল। এছাড়া সাইবেরির পুরু গ্রামের সবাইকে ঘর থেকে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছিল।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন